গত দুই বছর ধরে বিদেশে নারী কর্মী পাঠানোর সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। এক সময় বিদেশে নারী কর্মসংস্থানের প্রধান গন্তব্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। কিন্তু সেখানে গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন, কম বেতন, এবং খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে অনেক নারী দেশে ফিরে আসছেন। এতে বিদেশে নারী কর্মসংস্থানের প্রতি আগ্রহও কমছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিদেশে নারী কর্মী গিয়েছিলেন ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ১০৮ জনে, এবং ২০২৪ সালে তা আরও কমে ৬১ হাজার ১৫৮ জনে নেমে আসে।
সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যাওয়া মানিকগঞ্জের ফিরোজা জানান, সেখানে বেতন নিয়মিত না পাওয়া, খাবারের অভাব, এমনকি মারধরের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। অন্যদিকে, ফরিদপুরের শাহিদা বেগম বলেছেন, বাসায় কাজ করার সময় নির্যাতন এবং চিকিৎসার অভাবে তাঁকে দেশে ফিরতে হয়েছে।
বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী জানান, নারীদের প্রশিক্ষণকাল এক মাস থেকে দুই মাসে বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের নিয়োগকর্তারা এখন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নেওয়ার দিকে ঝুঁকছেন।
বিদেশ থেকে ফিরে আসা নারী কর্মীরা প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও ওকাপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো জানান, অনেক নারী মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, এবং কম বেতনসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এ কারণে নারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে এবং বিদেশে কাজের প্রতি আগ্রহ কমছে।
ওকাপের চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন, নারীদের জন্য গৃহকর্ম ছাড়া অন্য খাতে তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করা হয়নি। তাই ভবিষ্যতে বিদেশে নারী কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা প্রয়োজন।
এই সংকট দূর করতে এবং নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।