ঢাকার শব্দদূষণ এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে শান্তি যেন একটি বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে। নির্মাণস্থল থেকে আসা ধাতব কাটার আওয়াজ, ইট ভাঙার শব্দ, এবং যানবাহনের বিরামহীন হর্ন নগরীর পরিবেশকে প্রতিনিয়ত ভারী করে তুলছে।
মালিবাগের বাসিন্দা নাজমা বেগম জানান, রাস্তায় ফেরিওয়ালারাও এখন পণ্য বিক্রির জন্য লাউডস্পিকার ব্যবহার করে, যা সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এমনকি কানাডার বিল ম্যাকলেইন, যিনি ২০২৪ সালে ঢাকায় সফর করেছিলেন, শহরের শব্দদূষণের মাত্রায় হতবাক হয়ে ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করেছেন।
২০০৬ সালের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুসারে ঢাকার দিনের সময় শব্দের আদর্শ মান ৬০ ডেসিবেল নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাস্তবে এই সীমা প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধ হলেও তা এখনও রাস্তায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
শব্দদূষণের ফলে নগরবাসী, বিশেষ করে শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ এবং শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় উচ্চ মাত্রার শব্দে থাকার কারণে শ্রবণশক্তি হারানো, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের মতো সমস্যার ঝুঁকি বাড়ছে।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে গত বছর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়। আইন অমান্যকারীদের ৫০০ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। তবে এই উদ্যোগ এখনো কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দিতে পারেনি।
সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ১০টি সড়ককে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনা করেছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধুমাত্র হর্ন নিয়ন্ত্রণ করলেই ঢাকার শব্দদূষণ অন্তত ৬০% কমানো সম্ভব। তবে এ জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি, শক্তিশালী আইন প্রয়োগ এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জরুরি।
নগরজীবনে শব্দদূষণ একটি নিত্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ালেও, এর সমাধানে এখনও সমন্বিত উদ্যোগের অভাব রয়েছে। ঢাকাকে বসবাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের এই প্রচেষ্টা কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।