ভোগলিকভাবে বাংলাদেশের তিন দিকেই ভারতের বিস্তৃতি। আয়তনেও বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ২২ গুন বড় দেশটি। উৎপাদন আর প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকার কল্যানে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে দেশটির উপর।
আবার লম্বা সময় আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশটির সাথে সখ্যতাও তৈরি হয়েছে বেশ।
তবে বাংলাদেশ থেকে কত পরিমান টাকা প্রতি বছরে ভারতে চলে যাচ্ছে তা শুনলে চোখ কপালে উঠতে পারে যে কোন সচেতন মানুষের। আমদানি তে ভারতের উপর বেশ নির্ভরশীল বাংলাদেশ যদিও রপ্তানি হয় না তেমন কিছুই। সবশেষ প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮৬ কোটি ৮ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য, যা তার আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে যারা ভেবেছিলেন ভারত থেকে আমদানি কমে আসবে তারা এখনো অন্ধকারে রয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে।
এক মাসে ৮৬ কোটি ডলার বছর শেষে দাড়াবে অন্তত এক হাজার কোটি ডলারে। প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসেবে ভারত থেকে আমদানি ব্যয় দাড়াবে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায়।
এখানেই শেষ নয়, ভারতীয় বহু নাগরিক এখনো কাজ করছেন বাংলাদেশের কয়েকটি সেক্টরে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে গার্মেন্টস সেক্টরে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের বেতন ১০ টাকা হলে বৈধ ভাবে দেয়া হয় দুই টাকা, বাকি ৮ টাকাই গোপনে হুন্ডি করা হয়। তারপরও সরকারি হিসেবেই বাংলাদেশ থেকে ভারতীয়রা মজুরি হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা। তাহলে বাস্তব হতে পারে তারও কয়েকগুন।
এবার আসা যাক চিকিৎসা খাতে। ভারত সরকারের হিসেবেই প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অন্তত ২৫ লাখ মানুষ তাদের দেশে চিকিৎসা নিচ্ছে। গড়ে ১০ লাখ টাকা করে ব্যয় করলে এখানেও খরচ হয় অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা।
আসা যাক ভ্রমণ সমাচারে। পাসপোর্ট করেই বাংলাদেশিদের প্রথম আগ্রহ থাকে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ভারতে ভ্রমণ করতে গিয়েছে সাড়ে সাত লাখ। অর্থাৎ বছরে প্রায় ১৫ লাখ। তারা ভারতে গিয়ে কত টাকা ব্যয় করেন তার সঠিক কোন হিসেব না থাকলেও কয়েক হাজার কোটির কম নয়।
সবমিলে বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি চলে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশের মোট বাজেটের চার ভাগের এক ভাগ।
বিপরীতে তেমন কিছুই রপ্তানি হয় না বাংলাদেশ থেকে। এখন পর্যন্ত কোন বছরেই ১০ হাজার কোটির বেশি রপ্তানি করতে পারেনি বাংলাদেশ। তাদের দেশ থেকে রপ্তানিতে আগ্রহ দেখায় না বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ বহু পুরোনো।
তবে এরপরও বাংলাদেশ ভারতের উপরেই নির্ভর করবে। কারন দেশটি থেকে আমদানি খরচ তুলনামূলক কম ও অল্প সময়েই আমদানি করা যায়। তবে তাদের কোন পণ্য সংকট হলেই বন্ধ করে দেয়া হয় বাংলাদেশে রপ্তানি তাতে শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, চাপে পড়ে দেশের সাধারণ মানুষ। এজন্য তাদের সাথে আমদানি নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশ দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে পররাষ্ট্র নীতিতে “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়” শ্লোগানটি ধারণ করেছে, তবে গত দুই দশকে এই নীতি ভারতের একচেটিয়া স্বার্থের দিকে ধাপিত হয়েছে। ভারতের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিশেষত আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে এখন বৈষম্যমূলক অবস্থায় পৌঁছেছে। যা দূর করার উপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ অবস্থায়, ভারত সরকারকে নিজেদের স্বার্থ বজায় রেখে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সহযোগিতার পথ অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ করে, নতুন প্রজন্মের কাছে ভারতের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে, যারা তা পরিবর্তনের দাবি করছে। এই প্রজন্মই বাংলাদেশের ভবিষ্যত নেতৃত্বে আসবে।
অন্তবর্তী সরকার ভারতের সাথে এসব নীতি ঢেলে সাজাবে সেই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। পাশাপাশি নিজেদের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমিয়ে আনার উপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।