কথায় আছে, উঁচুতে উঠতে হাজার পরিশ্রম, নিচে পড়তে এক মুহূর্তই যথেষ্ট। সেই কথাই যেনো প্রমাণ করলো যুক্তরাষ্ট্রের এক সময়ের বাজেট এয়ারলাইনের রাজা স্পিরিট এয়ারলাইনস। একসময়ের দাপুটে কোম্পানিটি আজ দেউলিয়া হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
কেন এমন হলো তা নিয়ে এখন চলছে চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষণ। জানা গেছে, করোনা মহামারী, বড় এয়ারলাইন্সগুলোর প্রতিযোগিতা, আর জেটব্লুর সঙ্গে ব্যর্থ বিক্রয়ের চুক্তি—এই তিন ঝড়ে নুইয়ে পড়েছে স্পিরিট।
যাত্রার শুরু থেকে দেউলিয়া অবাক এক পতন দেখলো বিশ্ববাসী। ২০২০ থেকে ২০২৪—এই চার বছরে ২.৫ বিলিয়ন ডলার লোকসান! ভাবতে অবাক লাগলেও বাস্তবতা এমনি। তবে প্রতিষ্ঠানটিকে আগামী বছরেও ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ শোধ করতে হবে।
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের মূল্য ছিল আকাশছোঁয়া, এখন তা ৯৭% কমে রীতিমতো মাটিতে নেমে এসেছে। তবে এখনো বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে স্পিরিট। বন্ডহোল্ডারদের থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের সাহায্যও পেয়েছে। এছাড়া ৭৯৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ শেয়ারে রূপান্তর করা হয়েছে। ৩০০ মিলিয়ন ডলারের আরও ঋণের প্রতিশ্রুতিও মিলেছে। এসব টাকা দিয়ে তারা আবার উড়াল দিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
স্পিরিটের মূল শক্তি ছিল সস্তায় টিকিট বিক্রি করা। কিন্তু বড় এয়ারলাইনগুলো এখন নিজেদের সস্তা টিকিট অফার করছে। ফলে যাত্রীরা চলে গেছে অন্যদের কাছে। নিজের কৌশল বদলে স্পিরিট প্রিমিয়াম সেবা চালু করল, ফি তুলে দিল, কিন্তু তাতেও লাভ হলো না।
চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে স্পিরিট তাদের ফ্লাইট সংখ্যা ২০% কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলো। বিশ্লেষকদের মতে, এতে লাভের বদলে প্রতিদ্বন্দ্বীরা আরও সুবিধা পেয়ে বসে। তার ওপর বিমানের ইঞ্জিন মেরামতের জন্য বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বন্ধ করতে হয়েছে, যা সুনাম নষ্ট করেছে প্রতিষ্ঠানটির।
ফ্রন্টিয়ার আর জেটব্লুর সঙ্গে একত্রীকরণের চেষ্টাও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে লোকসানের ভাগিদার কে হতে চায় বলেন.?
এক সময় যেমন প্যানঅ্যাম আর টিডব্লিউএর মতো এয়ারলাইন দেউলিয়া হয়ে মুছে গিয়েছিল, আজ সেই একই দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি স্পিরিট। তবে কি এখানেই শেষ? নাকি আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে স্পিরিট? হয়ত সময়ের কাছেই রয়েছে সেই উত্তর।