জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলীয় কাঠামো শক্তিশালী করতে এবং ভোটের ময়দানে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে, তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দলীয় গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করার পাশাপাশি স্লোগান, ঘোষণাপত্র, সাংগঠনিক কাঠামো ও দলীয় প্রতীক নির্ধারণের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে হবে এনসিপিকে। এজন্য দলীয় গঠনতন্ত্র ও অন্যান্য শর্ত পূরণে কাজ করছে দলটির নেতারা। আপাতত কোনো সহযোগী সংগঠন গঠনের পরিকল্পনা না থাকলেও ভবিষ্যতে যুব, শ্রমিক, নারী ও ছাত্রদের নিয়ে আলাদা উইং গঠন করার কথা ভাবা হচ্ছে।
দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন যুগান্তরকে জানান, নতুন বা পুরোনো যে কোনো রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য থাকে জাতীয় নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা। এনসিপি জনগণের সমর্থন নিয়ে রাজনীতির ময়দানে উঠে এসেছে, তাই দলীয় লক্ষ্যও ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি দল গঠনের আগেই গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করেছিল। তবে তা বাস্তবায়ন সম্ভব না হওয়ায় বর্তমানে দ্রুততার সঙ্গে খসড়া তৈরির কাজ চলছে। দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা, পরিবারতন্ত্রের প্রভাবমুক্ত রাজনীতি, জবাবদিহিতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে গঠনতন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে।
যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার জানান, নিবন্ধনের জন্য গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করাই তাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। দলীয় কাঠামো ও শর্ত পূরণ করেই নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা হবে।
জেলা-উপজেলায় দলীয় কমিটি গঠন নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির বর্তমান কাঠামো রূপান্তর করা হবে নাকি নতুন কমিটি গঠিত হবে, তা কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী, একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর অফিস এবং অন্তত ১০০ উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানা কার্যালয় থাকতে হবে। এই শর্ত পূরণের জন্য দলীয় কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে।
এনসিপির প্রতীক নির্ধারণের কাজও চলছে। দল গঠনের আগে চালানো জনমত জরিপে বই, খাতা, কলম, মুষ্টিবদ্ধ হাত, কবুতর, শাপলা, ইলিশ ও বাঘসহ বেশ কিছু প্রতীকের প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্য থেকে চূড়ান্ত প্রতীক বেছে নেওয়া হবে।
এছাড়া, দলীয় সহযোগী সংগঠন নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে যুব, শ্রমিক, নারী ও ছাত্র উইং গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ভবিষ্যতে দলের সহযোগী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে।
যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন জানান, স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র, পরিবারতন্ত্রমুক্ত রাজনীতি ও যোগ্য নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে এনসিপির গঠনতন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এ কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।