পদ্মার ভাঙনপ্রবণ এলাকায় নদীশাসনের কাজ আটকে যাওয়ায় ভুক্তভোগীদের দুঃখের সীমা নেই। কুষ্টিয়ার দুটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, অথচ প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। নদীভাঙন মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় প্রতিদিনই কৃষি জমি, বসতবাড়ি, বাজার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীর তীব্র স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়ার কথা ছিল। ৩৩টি প্যাকেজের মধ্যে ১৮টির কার্যাদেশ দেওয়া হলেও জেলা প্রশাসকের (ডিসি) প্রস্তাব এবং নকশা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কারণে কাজটি থেমে যায়। ডিসি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ করার প্রস্তাব দেওয়ায় পুরো প্রকল্পটি পুনরায় মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এদিকে, সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল সরেজমিনে গিয়ে বুঝতে পারে, নদীর দিক পরিবর্তন হওয়ায় পুরনো নকশা অনুসারে কাজ করলে কোনো ফল হবে না।
পদ্মার ডান তীরে তীব্র ভাঙনের জন্য দায়ী হিসেবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সুরক্ষায় নির্মিত গ্রোয়েনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই গ্রোয়েনের কারণে নদীর স্রোত ডান তীরে সরাসরি আঘাত হানছে। এতে কুষ্টিয়ার মির্জানগর, তালবাড়িয়া, শামুখিয়া, সাহেবনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
এমতাবস্থায় এলাকার সাধারণ মানুষ দ্রুত বালির বস্তা ডাম্পিংসহ কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু প্রকল্পের কাজ বিলম্ব হওয়ায় তাদের হতাশা বাড়ছে। মির্জানগরের আলেয়া বেগমের মতো অসংখ্য মানুষ তাদের বসতভিটা হারিয়ে এখন আশ্রয়হীন।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, শুরুতেই কাজ শুরু করা গেলে এমন বিপর্যয় হতো না। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতার কারণে দরপত্র প্রক্রিয়া এবং কাজ শুরুতে বিলম্ব হয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে পদ্মার ভাঙনে আরও বহু জমি ও স্থাপনা নদীর গর্ভে হারিয়ে যাবে। তাই এখনই সঠিক পরিকল্পনা ও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।