ক্রিকেট, যে খেলাটি একসময় জাতি-ধর্ম-পার্থক্যের ঊর্ধ্বে গিয়ে বন্ধুত্ব আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনন্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতো, তা আজ রাজনীতির জটিল সমীকরণে জড়িয়ে পড়েছে। আসন্ন আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তান বৈরিতার নতুন অধ্যায় রচিত হচ্ছে। পাকিস্তান আয়োজিত এই টুর্নামেন্ট নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে এসেছে ভারত। এবার বিসিসিআই জানিয়ে দিল, টুর্নামেন্টের স্বাগতিক দেশের নাম নিজেদের জার্সিতে ছাপাবে না তারা।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রথম থেকেই বিতর্কের মধ্যে রয়েছে। পাকিস্তানে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই চাপ সৃষ্টি করেছিল, যা শেষমেশ আইসিসিকে বাধ্য করেছে হাইব্রিড মডেলে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে। ফলে ভারতের ম্যাচগুলো হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তবে এখানেই শেষ নয়, এবার ভারতীয় জার্সি থেকে পাকিস্তানের নাম মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনো টুর্নামেন্টে স্বাগতিক দেশের নাম এবং টুর্নামেন্টের লোগো প্রতিটি দলের জার্সিতে থাকতে হবে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এই নিয়ম অমান্য করতে চাইছে। পিসিবি এর প্রতিবাদ জানিয়ে এটিকে “খেলাকে রাজনীতির হাতিয়ার বানানো” বলে উল্লেখ করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিসিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, “ক্রিকেটকে সবসময় রাজনীতিমুক্ত রাখতে বলা হয়। কিন্তু বিসিসিআই একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে এই খেলাকে নোংরা রাজনীতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এটি খেলাটির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।”
বিসিসিআইয়ের এই সিদ্ধান্ত পিসিবির জন্য শুধু অপমানজনক নয়, বরং ক্রিকেটের সৌন্দর্যকেই কলঙ্কিত করছে। প্রথমে পাকিস্তানে খেলতে অস্বীকৃতি, এরপর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধিনায়ক না পাঠানোর ঘোষণা, আর এখন স্বাগতিক দেশের নাম মুছে ফেলার হীন প্রচেষ্টা—সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে, মাঠের খেলা ছাপিয়ে রাজনৈতিক কৌশল হয়ে উঠছে মুখ্য।
আইসিসি কীভাবে এই সংকট সমাধান করবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—ক্রিকেট শুধু ব্যাট-বলের লড়াই নয়, এখানে জড়িয়ে আছে সম্মান, ঐতিহ্য এবং অসংখ্য ভক্তের আবেগ। আর রাজনীতির এই ছায়া খেলাটির উজ্জ্বলতাকে ম্লান করতে পারে।