সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ১৩ বছর পূর্ণ হলেও আজও মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই তদন্তে কোনো স্পষ্ট অগ্রগতি দেখা যায়নি, বরং দফায় দফায় তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন হলেও খুনিরা অধরা রয়ে গেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর দ্রুত বিচার ও তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে তার কোনো ফল মেলেনি। প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ, পরে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এবং সর্বশেষ র্যাব মামলার তদন্ত করলেও কোনো কার্যকর তথ্য প্রকাশ করতে পারেনি।
২০১৮ সাল পর্যন্ত র্যাব মামলাটির দায়িত্বে থাকলেও তদন্তের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। গ্রেপ্তার করা হয় কয়েকজন সন্দেহভাজনকে, তবে প্রমাণের অভাবে তাদের কেউই অপরাধী সাব্যস্ত হয়নি। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলেও তা থেকে কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে আদালতের নির্দেশে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)–এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। নতুন করে তদন্ত শুরুর পর পিবিআই হত্যার সময় পাওয়া ডিএনএ নমুনার সঙ্গে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ মিলিয়ে খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। তবে এখন পর্যন্ত মামলার নিষ্পত্তি হয়নি, যা নিহতদের পরিবার ও দেশের সাংবাদিক সমাজের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে।
মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলম বলেন, “পিবিআই কয়েকবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সরকারের উদ্যোগ দেখে মনে হচ্ছে, তারা তদন্তের অগ্রগতি চায়, তবে এখনো আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না।”
তদন্তে ধীরগতি ও অনিশ্চয়তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক মহলও। তারা দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি ও প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার। তবে ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও সাগর-রুনি হত্যার রহস্যের জট কবে খুলবে, সে প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা।