বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার দেওয়ান হামজা চৌধুরী ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মাঠ পেরিয়ে এখন লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করবেন। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডে হলেও বাংলাদেশের প্রতি তার টান বরাবরই গভীর। সম্প্রতি দেশে ফিরে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাটে নিজ বাড়িতে পৌঁছালে স্থানীয়রা তাকে বীরের মতো বরণ করে নেয়।
হামজার বাবা গ্রেনাডিয়ান হলেও তার মা রাফিয়া চৌধুরী বাংলাদেশি। ছোটবেলা থেকেই মায়ের কাছ থেকে দেশীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় শিক্ষা পেয়েছেন তিনি। মাত্র সাত বছর বয়সে লেস্টার সিটি ক্লাবে যোগ দিয়ে ফুটবলে হাতেখড়ি নেন। এরপর দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ইংল্যান্ডের ফুটবল মঞ্চে আলো ছড়িয়ে এবার নিজ মাতৃভূমির হয়ে খেলার স্বপ্নে দেশে ফিরেছেন তিনি।
দেশে আসার পর হামজার প্রতি মানুষের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। হাজারো মানুষ তাকে একনজর দেখতে ভিড় জমায়। তার আগমনে পুরো এলাকাজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। স্থানীয়রা মনে করছেন, তার হাত ধরেই বাংলাদেশ ফুটবলে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
ধর্মীয় বিশ্বাসে দৃঢ় হামজা চৌধুরী প্রতিটি ম্যাচের আগে আয়াতুল কুরসি পড়ে মাঠে নামেন। তার স্ত্রী অলিভিয়াও একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম, যিনি হামজার মতোই ইসলামের নিয়ম মেনে চলেন। হামজার জীবনধারায় ধর্মের প্রভাব স্পষ্ট, যা তার বাবার কথাতেও উঠে এসেছে।
স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় ২০২২ সালে তিনি নিজ এলাকায় একটি এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে সেখানে ৩০ জন শিশু দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, যার সমস্ত ব্যয়ভার তিনিই বহন করেন। মাদরাসাটির নাম তিনি তার বড় ছেলের নামে রেখেছেন—”দেওয়ান ঈসা হুসাইন চৌধুরী হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা”।
বাংলাদেশি খাবারের প্রতি হামজার আলাদা ভালোবাসা রয়েছে। তার সবচেয়ে প্রিয় খাবার মোরগ পোলাও, যা তার স্ত্রী অলিভিয়াও পছন্দ করেন। এছাড়া, দেশীয় পিঠার প্রতি রয়েছে তার বিশেষ দুর্বলতা। ছোটবেলা থেকে বার্মিজ আচারও তার অন্যতম প্রিয় খাবার।
হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশে আসা শুধুমাত্র পারিবারিক সফর নয়, এটি দেশের ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার সূচনা। তার স্বপ্ন, বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের মঞ্চে নিয়ে যাওয়া। এই স্বপ্ন পূরণে দেশবাসীও তার পাশে থাকবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।