“শূন্য নীড়” কথাটা শুনলেই বুকের ভেতর এক অদ্ভুত শূন্যতা অনুভূত হয়। যদিও ঘর ছোট হতে পারে, কিন্তু কেন তা শূন্য হয়ে যাবে? আমাদের সমাজে পরিবারগুলো ছোট হয়ে আসছে, কিন্তু একসময় এটি শূন্য হয়ে যায়। এ এক অদ্ভুত বাস্তবতা, যেখানে বাবা-মায়েরা একাকীত্বের সঙ্গে সংগ্রাম করেন যখন তাদের সন্তানরা ঘর ছেড়ে নিজেদের জীবনে এগিয়ে যায়।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ১৮ বছর বয়সের পর থেকে সন্তানদের পরিবারের বাইরে চলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বাবা-মায়েরা এই সময়ে সন্তানের পৃথক হওয়ার প্রক্রিয়া অনুভব করেন, যা তাদের জন্য একাকীত্ব ও বিষণ্নতার সৃষ্টি করতে পারে। সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্ত আসে যখন সন্তান নিজের জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করে এবং চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
বাবা-মায়ের জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট তখনই হয়, যখন তারা তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য সব কিছু করে, কিন্তু একসময় সন্তান নিজস্ব জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে চলে যায়। এই অবস্থায় বাবা-মায়েরা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে, বিশেষত শহুরে জীবনে যেখানে প্রতিবেশী ও সামাজিক সম্পর্কগুলো তেমন দৃঢ় নয়। শহরের একক পরিবার গঠনের ফলে, যখন সন্তানরা একে একে ঘর ছেড়ে চলে যায়, তখন মা-বাবারা শূন্যতায় ভুগে।
সন্তানের বাড়ি ছাড়ার পর বাবা-মায়ের জীবনে একাকীত্বের যে অনুভূতি তৈরি হয়, তা অনেক সময় তাদের মানসিক অবস্থার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এম্পটি নেস্ট সিন্ড্রোম বা “শূন্য নীড় সিন্ড্রোম” একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তন বা শূন্যতা অনুভব করেন। বিশেষত মায়েরা, যারা সন্তানদের প্রাথমিক পরিচর্যাকারী, বেশি কষ্ট পান এই সময়টাতে।
এম্পটি নেস্ট সিন্ড্রোম মোকাবেলা করতে, বাবা-মায়েদের উচিত নতুন শখ বা আগের শখগুলো ফিরিয়ে আনা, কাজে ব্যস্ত থাকা এবং সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা। সাইকোথেরাপি ও কাউন্সেলিংও এ ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। তবে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বাস্তবতা মেনে নিয়ে নিজেদের নতুনভাবে আবিষ্কার করা এবং একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা।