নারী হিসেবে নয়, বরং একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবেই নিজের পরিচয় গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন শাহরিয়া সুলতানা। দীর্ঘ ৩৫ বছরের ক্রীড়াঙ্গনের যাত্রায় ২৫ বছর কাটিয়েছেন ভারোত্তোলনের সঙ্গে। খেলোয়াড় থেকে আজ জাতীয় কোচ এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক—সফলতার এই পথচলা মোটেও সহজ ছিল না। নানা প্রতিবন্ধকতা, সামাজিক কটাক্ষ ও প্রতিকূলতা সামলে এগিয়ে গেছেন নিজের লক্ষ্যে।
নড়াইলের মেয়ে শাহরিয়া সুলতানার ক্রীড়ায় আগ্রহ শুরু হয় ছোটবেলা থেকেই। শিক্ষক বাবার উৎসাহে খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চায় তিনি ছিলেন সবসময় অগ্রগামী। তবে বাইসাইকেল চালানো থেকে শুরু করে ভারোত্তোলনের কঠিন অনুশীলন—প্রতিটি ধাপে তাকে শুনতে হয়েছে সমাজের নানা কটূক্তি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন তিনি। হুমকি, ভয়ভীতি—এসব কিছু উপেক্ষা করেই চালিয়ে গেছেন অনুশীলন। সিনিয়রদের পরামর্শে ভারোত্তোলনে আসেন এবং ২০০২ সালের বাংলাদেশ গেমসে স্বর্ণপদক জয় করেন। এরপর আনসারে যোগ দিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের প্রতিভা তুলে ধরেন।
নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য কোচের অভাব, টুর্নামেন্টে অংশ নিতে গিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া—এসব সমস্যার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছে তার ক্যারিয়ার। তবু দমে যাননি। নিজের একাগ্রতা আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি পৌঁছেছেন আজকের অবস্থানে।
২০১৭ সালে ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। তবে তিনি মনে করেন, ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের জন্য আরও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা গেলে সাফল্যের পরিমাণ আরও বাড়বে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের সুনাম বাড়িয়ে তুলতে পারে।