২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে সরকার নতুন করে কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়ানো। গত ১ জানুয়ারি, প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে **মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধনী) অধ্যাদেশ-২০২৫** এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁ, পোশাক, মিষ্টির দোকান, হোটেল সেবাসহ বেশ কিছু পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁগুলোর খাবারের বিলের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য করা হয়, যা আগামী দিনগুলোতে ১৫ শতাংশে উন্নীত হবে। একইভাবে, পোশাকের আউটলেটের বিলের ওপরও বর্তমান ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হবে। মিষ্টির দোকানেও ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, নন-এসি হোটেল সেবার ওপর ভ্যাটও ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এছাড়া, রেস্তোরাঁ, পোশাক, মিষ্টি ও হোটেল সেবার পাশাপাশি কিছু উৎপাদনকারী পণ্যের ওপরও ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিস্কুট, আচার, সিআর কয়েল, টিস্যু পেপার, ম্যাট্রেস, ট্রান্সফরমার ইত্যাদি। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হচ্ছে, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ড তৈরির সময়ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হবে।
এই কর বৃদ্ধি নিয়ে সরকার জানিয়েছে, তাদের মূল লক্ষ্য রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্য পূরণে রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাটের হার বৃদ্ধি করা হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং চলমান রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর শর্ত, যেখানে বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের শর্ত পূরণের জন্য কর-সংগ্রহ বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। আইএমএফ পরামর্শ দিয়েছে, বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বৃদ্ধি করে রাজস্ব সংগ্রহের পথ সুগম করতে হবে।
এছাড়া, সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোরও উদ্যোগ। যেমন মদ, ফলের রস, তামাক, সুপারি, মোবাইল ফোন টকটাইমসহ কিছু সেবায় সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। বিমান ভ্রমণেও বাড়তে পারে আবগারি শুল্ক। অভ্যন্তরীণ বিমান ভ্রমণে শুল্ক বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে, এবং বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য ৭০০ টাকা, অন্যান্য দেশগুলোর জন্য ২৫০০ টাকা শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এসব কর বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি হবে, তবে রাজস্ব সংগ্রহের জন্য এটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।