গত ১৬ বছর ধরে চট্টগ্রামের রাউজান এলাকায় ক্ষমতার অঘোষিত রাজা ছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী। তিনি নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে পুরো এলাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং একাধিপত্য বিস্তার করতেন। তার শাসনে ভিন্নমত পোষণকারীদের ওপর একের পর এক অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হতো। শত শত মানুষ গুম-খুনের শিকার হয় এবং নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারে নিপীড়িত হতো। তার দখলে থাকা রাউজান এলাকায় প্রায় ১৬ বছর ধরে কোনো রাজনৈতিক স্বাধীনতা ছিল না এবং ক্ষমতার সমালোচনা করলেই শাস্তির মুখোমুখি হতে হতো।
ফজলে করিম তার ক্যাডারদের মাধ্যমে মাদ্রাসা, মসজিদ, স্কুলসহ সামাজিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। বিশেষভাবে মুনিরিয়া যুব তবলিগ কমিটি বাংলাদেশের সদস্যরা নির্যাতনের শিকার হন, তাদের অফিস ভাঙচুর, চাঁদাবাজি এবং মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করা হয়। একাধিক নেতাকর্মী ঘরছাড়া হয়ে পড়েন এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হতো। ২০১৭ সালে, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা নুরুল আলমের খুনের পর এই শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ওঠে, কিন্তু পুলিশও ফজলে করিমের নির্দেশে কার্যকর ছিল না।
শেষমেশ, ২০২৪ সালের আগস্টে তার পতন ঘটে। একে একে তার একাধিক অপকর্ম প্রকাশ পায় এবং ৫ আগস্টের পর তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। ১৩ সেপ্টেম্বর তাকে ভারত সীমান্তে পালানোর সময় গ্রেফতার করে বিজিবি। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দী, যেখানে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলমান এবং তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদও এক নতুন বিপদের ইঙ্গিত দেয়।