প্রায় ১৪ মাস ধরে চলা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পর, বুধবার লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। লেবাননের জন্য বিষয়টি ছিলো স্বস্তির। তবে, দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি গাজার যুদ্ধের পাশাপাশি চলমান লেবানন-ইসরায়েল সংঘর্ষ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে নেওয়া হয়েছিলো।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই বৃহস্পতিবার গাজায় ইসরায়েল ভয়াবহ আক্রমণ চালায়। যেখানে অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছে। বোমাবর্ষণ, ট্যাংক বাহিনী উত্তর ও দক্ষিণে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, দক্ষিণ গাজা অঞ্চলে “সন্দেহভাজন” গাড়িতে আসা লোকদের লক্ষ্য করে তারা আক্রমণ করেছে। যা হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন নয় বলেও দাবি করেছে ইসরায়েল। তবে এটিই ছিল যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর প্রথম ইসরায়েলি আক্রমণ।
জাতিসংঘের প্যালেস্টাইন শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি জানিয়েছেন, গাজায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। তিনি আরও জানান যে, গাজার উত্তরাঞ্চলে গত সাত সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েলের আক্রমণে ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। লেবাননের নিরাপত্তা সূত্র ও আল জাদীদ ব্রডকাস্টার জানিয়েছে, আক্রমণটি লিতানি নদীর উত্তরাঞ্চলীয় বেসারিয়াহ এলাকায় সংঘটিত হয়।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে, ইসরায়েলের আক্রমণে গাজায় ৪৪ হাজার ৩ শ ৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ৪ হাজার ৯শ ৩৩ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে, হামাস-নেতৃত্বাধীন আক্রমণে ইসরায়েলে ১ হাজার ১শ ৩৯ জন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “শক্তভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, কিন্তু প্রয়োজন হলে আইডিএফকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতেও বলা হয়েছে।
এদিকে, লেবাননও ইসরায়েলকে বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৩ হাজার ৯শ ৬১ জন নিহত ও ১৬ হাজার ৫শ ২০ জন আহত হয়েছে বলে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়। এখন পর্যন্ত ১২ লাখ লেবানিজ শরণার্থী হলেও, হাজার হাজার মানুষ বুধবার থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় প্রথমে দুই মাসের বিরতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে হিজবুল্লাহকে দক্ষিণ লেবানন থেকে সশস্ত্র উপস্থিতি প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি ইসরায়েলি বাহিনীও তাদের সীমান্তে ফিরে যাবে। এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স একটি আন্তর্জাতিক প্যানেল গঠন করেছে।
এদিকে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, “গাজার জনগণের জন্য দুর্ভিক্ষ অনিবার্য”। তারা বর্তমানে মানবিক সাহায্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলেও জানিয়েছে জাতীসংঘ।