একজন নারী কি কেবল সংসারের জন্য? তার কি কোনো স্বপ্ন থাকতে নেই? সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণার বিরুদ্ধে এমনই এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় ‘মিসেস’ সিনেমা, যেখানে রান্নাঘর হয়ে ওঠে এক কঠোর পরীক্ষার কেন্দ্রবিন্দু।
গল্পের শুরু
দিবাকর ডাক্তার, প্রতিষ্ঠিত একজন পেশাজীবী। সংসার শুরু করতে চান এমন এক মেয়ের সঙ্গে, যিনি শুধু সুন্দরীই নন, বরং গুণবতীও। এই খোঁজে মিল হয় রিচার সঙ্গে—একজন প্রতিভাবান নৃত্যশিল্পী। পারিবারিক পছন্দ-অপছন্দের মধ্য দিয়ে তাদের বিয়ে ঠিক হয়।
বিয়ের পর নববধূকে গাড়িতে তুলে আনেন দিবাকর। কিন্তু নতুন জীবনের শুরুতেই রিচা বুঝতে পারেন, এই সংসার তার জন্য এক নতুন পরীক্ষা। বিয়ের উপহার খুলতে গিয়ে দেখতে পান একের পর এক রান্নার সরঞ্জাম। যেন তার ভূমিকা শুধু রান্নাঘরেই সীমাবদ্ধ!
সংসারের নিয়ম ও রিচার লড়াই
রিচা ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন, তার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন মনে করে, একজন বউয়ের একমাত্র দায়িত্ব তিনবেলা রান্না করা। রান্নার নিয়মও কড়া—প্রেশার কুকার নয়, ধীর আঁচে দম দিয়ে রান্না করতে হবে। ব্লেন্ডার নয়, শিল-পাটা ব্যবহার করতে হবে। আর কাজের লোক? সে তো কল্পনাও করা যাবে না!
পুরুষদের রান্নাঘরে প্রবেশ নিষেধ, স্ত্রীকে সাহায্য করা তো দূরের কথা। কারণ, তারা তো সংসারের জন্য উপার্জন করছে—এটাই নাকি যথেষ্ট!
বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি
‘মিসেস’ শুধুই রিচার গল্প নয়; এটি বহু নারীর সংগ্রামের প্রতিচিত্র। আমাদের মা-দাদিদের জীবনের সাথে এই গল্প মিলে যায় অবিকল। পরিচালকের সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি এই বাস্তবতাকে আরও তীক্ষ্ণভাবে তুলে ধরেছে।
এই সিনেমা মালয়ালম চলচ্চিত্র ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’-এর হিন্দি রিমেক হলেও, পরিচালক আরতি কাদব কপি-পেস্ট না করে নতুন আঙ্গিকে গল্প ফুটিয়ে তুলেছেন। সিনেমার প্রতিটি দৃশ্য যেন সমাজের প্রচলিত নিয়মকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
অভিনয়ের প্রশংসা
সানিয়া মালহোত্রা, যিনি ‘দঙ্গল’-এ অভিনয় করে আলোচনায় এসেছিলেন, এখানে রিচার ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেছেন। তার হাসিমুখ থেকে ধীরে ধীরে হতাশার ছায়া নেমে আসার পরিবর্তন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। নিশান্ত দাহিয়াও তার চরিত্রে ভালো পারফর্ম করেছেন।
রান্নাঘরের থ্রিলার!
কেউ কেউ ‘মিসেস’কে ‘রান্নাঘরের থ্রিলার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। কারণ, এটি শুধুমাত্র রান্নার গল্প নয়, বরং এক নারীর আত্মসম্মান ও স্বাধীনতার লড়াই। ছোট ছোট দৃশ্যেও দারুণ বার্তা রয়েছে—যেমন পানির পাইপ থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়া সম্পর্কের টানাপোড়েন বোঝায়, কিংবা ছোট্ট একটি মেয়ের কথা রিচাকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়।
এই সিনেমা বড় বাজেটের নয়, নেই চটকদার গান বা অ্যাকশন দৃশ্য। তবে এতে রয়েছে সমাজের গভীর বাস্তবতার প্রতিচিত্র, যা বহু নারীর জীবনের প্রতিফলন। স্থান-কাল-পাত্র ভিন্ন হলেও, এই গল্প এখনও আমাদের সমাজে প্রবলভাবে বিদ্যমান।