বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে বিধ্বস্ত গাজার সঙ্গে তুলনা করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে দেশের প্রতিষ্ঠান, নীতি, জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে দেশে ফেরার পর এক রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তখনও রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের রক্তের দাগ শুকায়নি। সরকারি দমন-পীড়নে প্রাণ হারানো মানুষের মরদেহ তখনও মর্গে স্তূপ করে রাখা ছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। তবে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে, যখন ক্ষুব্ধ জনতা তার বাসভবনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তবে, পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগেই শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে দেশত্যাগ করেন এবং ভারতে আশ্রয় নেন।
৮৪ বছর বয়সী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ হিসেবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে দূরে ছিলেন। তবে, শেখ হাসিনার শাসনামলে তাকে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল। এ সময় তাকে রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখা হতো।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতা যখন তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিতে আহ্বান জানায়, তখন তিনি সে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে প্রকৃত কোনো সরকার ছিল না, বরং এটি একটি পারিবারিক কর্তৃত্ববাদী শাসনে পরিণত হয়েছিল। রাষ্ট্রের সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কেবল একজন ব্যক্তির ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল ছিল।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ভয়াবহ অবনতি সম্পর্কে তিনি জানান, ব্যাপক দুর্নীতির কারণে ব্যাংকিং খাত প্রায় ধসে পড়ে। এমনকি আন্তর্জাতিক মহলেও বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এ সময় শেখ হাসিনার আত্মীয়দের দুর্নীতির বিষয়টিও উঠে আসে। যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সাবেক এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে, তার বিরুদ্ধেও আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে, যার ফলে তাকে পদত্যাগ করতে হয়। যদিও তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টায় ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান এবং বলেন, “আসুন, আমাদের সঙ্গে চুক্তি করুন।”
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি বাংলাদেশকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ইউএসএআইডির তহবিল সংকোচন এবং বাংলাদেশের ওপর চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়নের অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু সাহায্য স্থগিত করেছে। এতে ড. ইউনূসের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানোর প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ সংকট কাটিয়ে উঠতে ড. ইউনূস মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের সহযোগিতা নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর আহ্বান জানিয়েছেন। আগামী এপ্রিল মাসে ইলন মাস্কের বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।