বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন সংস্কার কমিশন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে। কমিশনের প্রতিবেদনে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধে অভিযুক্তদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এমনকি, এ ধরনের অভিযুক্তরা কোনো রাজনৈতিক দলে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না বা সদস্যপদেও থাকতে পারবেন না। সংবিধানের ৬৬(২)(ছ) অনুচ্ছেদের আওতায় একটি বিশেষ আইন প্রণয়নের প্রস্তাব উঠে এসেছে, যা অভিযুক্তদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ বন্ধ করবে।
প্রতিবেদনে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনর্নির্বাচন, ‘না’ ভোটের বিধান চালু, এবং একাধিক আসনে একই ব্যক্তির প্রার্থী হওয়ার সুযোগ বাতিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ইভিএম ব্যবহারের বিধান বাতিল, প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা চালু এবং নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার পাশাপাশি, নির্বাচনকালীন আচরণবিধি কঠোর করার প্রস্তাব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করা প্রয়োজন। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বৃহত্তর নির্বাচকমণ্ডলীর মাধ্যমে ভোট আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংসদ সদস্যদের সুবিধা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে, যেখানে শুল্কমুক্ত গাড়ি সুবিধা, আবাসন, প্রটোকল এবং ভাতা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া হলফনামা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রার্থীর তথ্য গোপন বা মিথ্যা হলে তার প্রার্থিতা বাতিল করার বিধান চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, দেশের নির্বাচনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র এবং সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসব প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি বলেন, “নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে গেছে। এটিকে সংস্কার করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।” সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এসব সুপারিশ কার্যকর হলে বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা আরও সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক হবে।