যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে কোনো প্রবৃদ্ধিই অর্জন করতে পারেনি। যা দেশটির অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্থবির হয়ে রয়েছে অবস্থায় বিনিয়োগ, ভোক্তা ব্যয় ও উৎপাদন খাত। যায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুরো অর্থনীতিতে।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস জানিয়েছে, তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষণ দেখায়নি। আগের প্রান্তিকে সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর আর্থিক নীতি এবং উচ্চ সুদের হার অর্থনীতিকে সংকুচিত করে তুলেছে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ভোক্তা ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে ও ব্যবসাগুলো নতুন বিনিয়োগে অনীহা দেখাচ্ছে।
তার উপর, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও শ্রমবাজারের সংকটও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যের মুদ্রাস্ফীতির হার এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য মাত্রা ২ শতাংশের বেশি। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত করেছে, যা ঋণ গ্রহণের খরচ বৃদ্ধি করে অর্থনীতিতে চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি বলেছেন, প্রাথমিক লক্ষ্য মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনবে। তবে এ প্রক্রিয়ায় অর্থনীতিতে কিছু চাপ তৈরি হওয়াও স্বাভাবিক।
অর্থনীতির স্থবির অবস্থার কারণে সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। ভোক্তাদের আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় তাদের ব্যয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো উচ্চ সুদের হার ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে তাদের কার্যক্রম সীমিত করেছে। যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “অর্থনীতির এই অবস্থাকে তারা হালকাভাবে নিচ্ছেন না। টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি নীতি গ্রহণ করার কথাও বলেছেন তিনি।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে যদি কাঠামোগত সংস্কার ও সঠিক নীতি গ্রহণে দেরি করা হয়। এছাড়া, ব্রেক্সিট-পরবর্তী আমদানি-রপ্তানি খাতে জটিলতাও প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করছে। অর্থনীতিবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি, ব্যবসায়ীদের জন্য কর সুবিধা এবং উদ্ভাবনী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব।
তবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রবৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই হবে সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।