আফগানিস্তান বর্তমানে একটি গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। আগে যে স্থিতিশীলতার আভাস ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। দেশটির অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং নারীরা কার্যত গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানবিক সংকট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
একসময় অনেকেই তালেবান সরকারের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন, তবে বর্তমানে তাদের মধ্যে হতাশা দেখা যাচ্ছে। তালেবান নেতৃত্বের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান বিভাজন স্পষ্ট হচ্ছে এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এই বিভাজন আরও গভীর হয়, তবে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের আশঙ্কা রয়েছে।
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে এই মতবিরোধের কথা স্বীকার করেছেন, তবে তিনি জানান যে এটি এখনো সংঘাতে রূপ নেয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, তালেবানের মধ্যে গভীর বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে এবং এটি ভবিষ্যতে বড় সংকটের সৃষ্টি করতে পারে।
তালেবান কখনও একদম ঐক্যবদ্ধ দল ছিল না। তাদের মধ্যে জাতিগত, গোত্রগত এবং আঞ্চলিক বিভাজন রয়েছে। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন নারী শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। মোল্লা হিবাতুল্লাহ এখনো কঠোর আদর্শিক অবস্থানে রয়েছেন এবং দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
তালেবান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য বন্ধ হওয়ার বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি, তবে এটি তাদের জন্য এক ধরনের “আশীর্বাদ” হতে পারে। কারণ, মোল্লা হিবাতুল্লাহ ইতোমধ্যে বিদেশি এনজিওগুলোকে দেশ থেকে বের করার পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হল, আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য এবং সামাজিক খাত সম্পূর্ণভাবে বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।
এদিকে পাকিস্তানও তালেবান সরকারকে ইতিবাচকভাবে দেখছে না। তাদের মূল উদ্বেগ হলো পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি), যারা আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। পাকিস্তান আশা করেছিল, তালেবান সরকার এই গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে, কিন্তু এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে না।
তালেবানের মধ্যে বিদ্রোহের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে এবং এটি আফগানিস্তানের সংকট আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে আফগান জনগণ যদি শান্তিপূর্ণভাবে তালেবানকে তাদের নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য করতে পারে, তবে দেশটি তার ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে সক্ষম হতে পারে।