রাজধানী ঢাকা বর্তমানে চরম বায়ুদূষণের কবলে পড়েছে, যার প্রভাব জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর অত্যন্ত নেতিবাচক। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরের বায়ু মান সূচক (AQI) এমন একটি স্তরে পৌঁছেছে যা সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, বায়ুদূষণ যদি এভাবে চলতে থাকে, তবে তা শ্বাসযন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে যানবাহনের অতিরিক্ত সংখ্যা, নির্মাণ কাজের ধুলো, কল-কারখানার বর্জ্য, এবং কৃষিক্ষেত্রে অগ্নিদ্বেষণের ফলে উৎপন্ন ধোঁয়া। বিশেষ করে শীতকালীন কুয়াশা ও আর্দ্র পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে, যা মানুষের জন্য আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। গত কয়েক সপ্তাহে ঢাকার বায়ু মান বেশ কয়েকবার “খুবই অস্বাস্থ্যকর” পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত নিরাপদ সীমার চেয়ে বহু গুণ বেশি।
এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষকে কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বায়ুদূষণের প্রভাব থেকে সুরক্ষা পেতে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে দূষণযুক্ত পরিবেশে চলাফেরা করার সময় সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া। এর মধ্যে মাস্ক পরিধান করা, বিশেষ করে PM2.5 কণিকার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় এমন N95 ধরনের মাস্ক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, দিনের শীর্ষ সময়গুলোতে যেখানে বায়ু দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি, সেসব সময়ে বাড়ির বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। বিশেষ করে শিশুরা, বৃদ্ধরা এবং যারা শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা বা হৃদরোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য এই সময়ে বাইরে না যাওয়া আরও জরুরি।
এছাড়াও, ঘরের ভিতরে বায়ু পরিষ্কার রাখতে উচ্চমানের এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এটি বায়ুর ক্ষতিকর কণিকা, গ্যাস ও ধোঁয়া শোষণ করে ঘরের ভিতরে বিশুদ্ধ পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করবে। তবে, শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ যথেষ্ট নয়। বায়ুদূষণ কমানোর জন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন যে, দীর্ঘমেয়াদে বায়ু দূষণের শিকার হলে মানুষের শ্বাসযন্ত্র ও হৃদপিণ্ডের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, যারা বায়ু দূষণের কারণে সমস্যায় পড়ছেন, তাদের দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বায়ুদূষণের কারণে কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, চোখে জ্বালা এবং অ্যালার্জি বাড়তে পারে, যা অনেকে উপেক্ষা করেন। এসব লক্ষণ দেখা দিলে তড়িৎ চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
এদিকে, পরিবেশ অধিদফতরসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় দূষণ কমানো, নির্মাণকাজের ধুলো নিয়ন্ত্রণ, শিল্প-কারখানায় নির্গমন নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পদক্ষেপগুলোর পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য আরও উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে নাগরিকরা নিজেদের সুরক্ষা সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং দূষণ কমাতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।
ঢাকার বায়ু দূষণ সমস্যা এখন একটি গুরুতর স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু সরকারের একক দায়িত্ব নয়; এটি একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যেখানে নাগরিকরা, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো একযোগে কাজ করে এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। যদি বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে ভবিষ্যতে এর ফলাফল আরও মারাত্মক হতে পারে।