মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার পর এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। এর মধ্যেই অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপ হাজার হাজার মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ধরপাকড় চালানো হয়েছে, গ্রেপ্তার ও নির্বাসিত করা হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে। একাধিক মানুষের জন্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে আশ্রয়ের পথ।
এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এই আন্দোলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে, যার নাম ‘ন্যাশনাল অরিজিন-বেইজড অ্যান্টিডিস্ক্রিমিনেশন ফর নন–ইমিগ্র্যান্টস অ্যাক্ট’। এই বিল কংগ্রেসে উপস্থাপন করেন প্রতিনিধি জুডি চু এবং সিনেটর ক্রিস কুনস। আইনটি পাস হলে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ধর্ম, জাতীয়তা বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা কমে যাবে এবং তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন এই আইনটির প্রয়োজন? কারণ, ট্রাম্পের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর প্রথম মেয়াদের মুসলিম ও আফ্রিকান নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় চালু করার। ২০১৭ সালে, ট্রাম্প যখন প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হন, তখন তিনি মুসলিমদের জন্য প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এটি একটি নির্বাহী আদেশ ছিল, যার ফলে বিমানবন্দরগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং শত শত মুসলিম নাগরিক আটকে পড়েন। পরে এই নিষেধাজ্ঞা আরও বিস্তৃত করা হয়, যার ফলে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, এবং মানবিক বিপর্যয়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষরা ভিসা থেকে বঞ্চিত হন।
এই নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘদিন কার্যকর থাকলেও, এখনো এর ক্ষতিকর প্রভাব রয়ে গেছে। বহু পরিবার বিচ্ছিন্ন, অনেকেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায়নি, এবং বহু অর্থও হারিয়েছে। এর পাশাপাশি বেড়েছে অভিবাসনবিরোধী মনোভাব এবং ইসলামবিদ্বেষ।
এখন, ট্রাম্প আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছেন, যেখানে শুধু নিষিদ্ধ দেশগুলোর নাগরিকদেরই নয়, বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরতদেরও সন্দেহের চোখে দেখা হবে। এর ফলে যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় হয়রানির শিকার হতে পারেন।
এই পরিস্থিতিতে, মুসলিম অ্যাডভোকেটস এবং নো মুসলিম ব্যান এভার জোট কংগ্রেস সদস্য জুডি চু এবং সিনেটর ক্রিস কুনসের সঙ্গে ২০১৯ সাল থেকে নো মুসলিম ব্যান আইনটি নিয়ে লড়াই করছে। এই আইনটি পাস হলে, প্রেসিডেন্টরা আর কোনো সম্প্রদায়ের ওপর সামান্য অজুহাতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে না এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে পররাষ্ট্র দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র দপ্তরের কংগ্রেসকে অবহিত করতে হবে।
এই আইন পাস না হলে, ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্টরা নির্বিচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে সক্ষম হবেন, যা মানবাধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য হুমকি হতে পারে। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট বাইডেনও সীমান্ত বন্ধ করার মতো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, এবং ট্রাম্প ২০২৫ সালে দক্ষিণ সীমান্ত বন্ধ করতে পারেন।
এমন কঠোর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে নো মুসলিম ব্যান আইন একটি ন্যায্য এবং মানবিক বিকল্প হিসেবে প্রস্তাবিত হচ্ছে। এটি মুসলিমদের জন্য আশ্রয় এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন প্রদান করবে।