ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গত অক্টোবর মাসে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ট্রাকে করে সুলভ মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছিল। তবে মাত্র দুই মাসেরও কম সময় চলার পর গত ডিসেম্বরের শেষে এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে অনিয়মের অভিযোগে বাতিল করা হয়েছে ৪৩ লাখ পরিবার কার্ড।
অর্থনীতিবিদদের মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে ট্রাক সেল বন্ধ হওয়ায় তাদের কষ্ট আরও বেড়েছে। গত বছর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, টানা ৯ মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কে ছিল। এই পরিস্থিতিতে ট্রাক সেলের মতো কার্যক্রম সাধারণ মানুষের জন্য বড় সহায়তা হতে পারত।
টিসিবি গত অক্টোবরে ঢাকার ৫০টি এবং চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে ট্রাকে করে ভর্তুকিমূল্যে ভোজ্যতেল, চাল ও ডাল বিক্রি শুরু করে। প্রতিটি ট্রাক থেকে প্রতিদিন ৩৫০ জন ক্রেতা সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে পারতেন। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার তেল, পাঁচ কেজি চাল এবং দুই কেজি মসুর ডাল কিনতে পারতেন, যা তাদের গড়ে ৩৫০ টাকার মতো সাশ্রয় করত।
টিসিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাময়িকভাবে চালু করা এই কার্যক্রমের মেয়াদ শেষ হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিল তারা। এখন পর্যন্ত নতুন কোনো নির্দেশনা না আসায় কার্যক্রমটি চালু হয়নি।
২০২২ সালে টিসিবি ট্রাক সেলের পরিবর্তে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পরিবার কার্ড চালু করেছিল। এ কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি পরিবারের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে মাসিক পণ্য সরবরাহ করা হতো। তবে সম্প্রতি এ কার্ড বিতরণে অনিয়ম ধরা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে ৪৩ লাখ কার্ড বাতিল করা হয়। বর্তমানে ৫৭ লাখ পরিবারের জন্য নতুন স্মার্ট কার্ড চালু করা হয়েছে এবং এটি পর্যায়ক্রমে আরও বাড়ানো হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যাপিডের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক বলেছেন, ট্রাক সেল বন্ধ করা উচিত হয়নি। বাতিল হওয়া ৪৩ লাখ পরিবার কার্ডের সমপরিমাণ পণ্য যদি ওএমএস বা ট্রাক সেলের মাধ্যমে সরবরাহ করা হতো, তবে সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব হতো।
খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরসহ শ্রমঘন এলাকাগুলোতে ওএমএস কার্যক্রম চলছে। এসব কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়েও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে টিসিবি পুনরায় ট্রাক সেল চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এ ধরনের উদ্যোগ বাড়ানো গেলে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হবে।