বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্যরা কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। বৃহস্পতিবার বাফুফে ভবনের নিচে এক অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র খেলোয়াড় সাবিনা খাতুন, মাসুরা পারভীনসহ প্রায় ১৫ জন ফুটবলার তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জানান, কোচের সঙ্গে দলের দূরত্ব অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়েছে, যা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালীন আরও প্রকট হয়। তার একগুঁয়েমি ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দলের পারফরম্যান্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে সিনিয়র খেলোয়াড়দের বাদ দিয়ে যে একাদশ মাঠে নামানো হয়েছিল, তা যে ভুল ছিল, তা ম্যাচের ফলেই স্পষ্ট হয়েছিল। কোচের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তখনই খেলোয়াড়দের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়, যা পরে আরও তীব্র হয়।
ফুটবলারদের অভিযোগ, কোচ শুধু মাঠের কৌশলগত দিকেই ব্যর্থ নন, বরং তার আচরণও অত্যন্ত আপত্তিকর। তিনি খেলোয়াড়দের উপেক্ষা করেছেন, সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছেন এবং এমনকি তাদের পোশাক ও শারীরিক গঠন নিয়েও কটূক্তি করেছেন। কোচ নিয়মিত বডি শেমিং করেছেন, খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেছেন এবং তাদের শৃঙ্খলা ভঙ্গের মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। তবে তারা জোর দিয়ে বলেছেন, অতীতে কোনো কোচ কখনো তাদের শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি, তাই পিটারের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সময়ই খেলোয়াড়দের মধ্যে কোচের প্রতি অসন্তোষ চরমে পৌঁছায়। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে যখন বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল, তখন তিনি হঠাৎ সানজিদাকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু বদলির কাগজপত্র ঠিকঠাক না থাকায় সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এমন দায়িত্বহীনতা এবং অব্যবস্থাপনা তাদের জন্য হতাশাজনক। কৃষ্ণা রানী সরকারের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটন ঘটেছে, যেখানে কোচ তার জার্সির নম্বর ভুলে গিয়ে রেগে যান এবং অপমানজনক আচরণ করেন। খেলোয়াড়দের মতে, একজন পেশাদার কোচের কাছ থেকে এমন অদক্ষতা ও খারাপ ব্যবহারের আশা করা যায় না।
ফুটবলাররা এই পরিস্থিতি নিয়ে বাফুফে সভাপতির কাছে চিঠি দিয়েছেন এবং স্পষ্ট জানিয়েছেন, তারা পিটার বাটলারের অধীনে আর কোনো ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশ নেবেন না। তারা মনে করেন, তার উপস্থিতি দলে একটি বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে, যা খেলোয়াড়দের মানসিক ও পেশাদার জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। যদি বাফুফে কোচকে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকে, তবে তারা একযোগে দল থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন। ফুটবলারদের মতে, যদি বাফুফে সত্যিই নারী ফুটবলের উন্নতি চায়, তবে এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা উচিত, নইলে দলের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে যেতে পারে।