করোনার ভয়াবহ স্মৃতি এখনও মানুষের মনে দগদগে। তাই নতুন কোনো ভাইরাসের নাম শুনলেই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)-এর প্রাদুর্ভাব সেই আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এই ভাইরাস কোনো নতুন বিষয় নয়। ২০০১ সাল থেকেই এটি দেশে বিদ্যমান এবং এর বিরুদ্ধে মানুষের শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি গড়ে উঠেছে।
রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন জানান, “এইচএমপিভি নিয়ে ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটি ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো একটি সাধারণ ভাইরাস। তবে ভাইরাসটি যেন বেশি ছড়াতে না পারে, সেই সচেতনতায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, বেশি ছড়ালে এটি রূপান্তরিত হয়ে নতুন চরিত্র নিতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “নিয়মিত হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা এবং আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কার্যকর। যদি জ্বর বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”
এইচএমপিভি ভাইরাস হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। স্পর্শ বা সংস্পর্শ থেকেও এটি ছড়াতে পারে। আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ দেখা দেয়। শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষেরা ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, “এইচএমপিভি নতুন কিছু নয়। প্রতিবছরই বাংলাদেশে এর কিছু রোগী পাওয়া যায়। অধিকাংশ রোগীই ৩-৪ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। তাই আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই।”
চীনে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে হাসপাতালগুলোতে ভিড় দেখা যাচ্ছে। জাপান, মালয়েশিয়া এবং ভারতে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি মৌসুমি ভাইরাস এবং সাধারণ সতর্কতা মেনেই এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাস নতুন নয়, তাই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সচেতনতা বাড়ানোর দিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে ভাইরাসের মিউটেশন পর্যবেক্ষণে সার্ভিলেন্স বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যতই হোক, সচেতনতার মাধ্যমে এর ভয়াবহতা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন সচেতনতা।