জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশের পর থেকে দলটির নেতাদের মুখে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দলের শীর্ষ নেতারা তাদের বক্তৃতার শেষে এই স্লোগান ব্যবহার করায় প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি দলীয় স্লোগান নাকি শুধুই একটি ঐতিহাসিক প্রতিধ্বনি?
‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানটির উৎপত্তি উর্দু কবি এবং ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা মাওলানা হাসরাত মোহানির কাছ থেকে। ১৯২১ সালে তিনি প্রথম এই স্লোগান ব্যবহার করেন, যা পরে বিপ্লবী নেতা ভগত সিংয়ের কণ্ঠে আরও জনপ্রিয় হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, এর অর্থ হলো ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’, যা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক জাফর আহমেদ ভূঁইয়া জানান, ‘ইনকিলাব’ শব্দটি আরবি থেকে এসেছে, যার অর্থ বিপ্লব, আর ‘জিন্দাবাদ’ উর্দু শব্দ, যার অর্থ দীর্ঘজীবী হওয়া বা অভিনন্দন জানানো। ফলে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বলতে বোঝায় বিপ্লবকে অভিনন্দন জানানো বা এর স্থায়িত্ব কামনা করা।
নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির শীর্ষ নেতারা জানান, দলীয় স্লোগান নির্ধারণের কাজ এখনও প্রক্রিয়াধীন। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘এই স্লোগানটি আমাদের দলীয় স্লোগান নয়। তবে সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় আমরাও কর্মসূচিতে এটি ব্যবহার করছি।’ তিনি আরও জানান, দলের মূলনীতি এবং আনুষ্ঠানিক স্লোগান শিগগিরই নির্ধারণ করা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশে অতীতেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের আদর্শ অনুযায়ী বিশেষ স্লোগান গ্রহণ করেছে। যেমন, বিএনপি ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ এবং জাসদ ‘বাংলার মেহনতি মানুষের জয় হোক’ স্লোগান ব্যবহার করত। জাতীয় নাগরিক পার্টি যদি ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানটি গ্রহণ করে, তবে এটি দলটির বিপ্লবী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন হিসেবে ধরা যেতে পারে।
নতুন এই দল ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার কথা বলছে, যার লক্ষ্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক কাঠামো পুনর্গঠন। তাই তারা যদি ঐতিহাসিকভাবে ব্যবহৃত একটি বিপ্লবী স্লোগানকে নিজেদের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করে, তবে তা আশ্চর্যের কিছু নয়। তবে দলটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।